রুপালী জগতের সেই সোনালী দিন গুলো হয়তো আর ফিরে আসবে না । পার্শ্ববর্তী দেশের এক একটি রাজ্যের সিনেমা যখন হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করছে, ঠিক সেই একই সময় আমাদের দেশের সিনেমা হল গুলো দর্শক শূন্য। চট্টগ্রামের জীবিত দুটি সিনেমা হলের কর্নধার, লোকশানে গুনছে দিন, সুদিনের আসায়। ভালো গল্পের সিনেমা দেখতেও আসছে না দর্শক। সুগন্ধা সিনেমা হলের পরিবেশ সত্যি প্রশংসা পাবার মত হলেও ৪ থেকে ৫ জন দর্শক নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হলটি।
চট্টগ্রামে চলচ্চিত্র চর্চার ইতিহাস অনেক পুরনো। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত শতাব্দীর শুরুর দিকে চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলো তৈরি হতে থাকে। ৭০ এবং ৮০-র দশকেও চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলোতে সগৌরবে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। তবে ৯০ দশকের শেষ দিকে এসে সিনেমা হলগুলোতে দর্শক সংখ্যা কমতে থাকে। দর্শকের অভাবে একের পর এক বন্ধ হয়ে যেতে থাকে সিনেমা হল।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে একসময় ৩৫টির মতো সিনেমা হল ছিল। হলের এমন সংখ্যাই বলে দেয় এখানে কেমন ছিল চলচ্চিত্র ব্যবসা। কিন্তু সেসব এখন সোনালী অতীত। বর্তমানে কমতে কমতে সেই সংখ্যা নেমেছে দুইয়ে। চালু হলগুলোর অবস্থাও তেমন ভালো নয় ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো মানের চলচ্চিত্র তৈরি না হওয়ায় দর্শকরা হলে আসছেন না। এছাড়া স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে ঘরে বসে পছন্দের ছবি দেখার সুযোগ থাকায় হলে সিনেমা দেখার আগ্রহ কমে গেছে। দর্শকদের সিনেমা হলমুখী করতে হলে ভালো মানের চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে, ভালো মানের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ভালো মানের সিনেমা হলের সংকটকেও চলচ্চিত্র ব্যবসার কমে আসার জন্য দায়ী করছেন দর্শকরা। দর্শকের ভিন্ন মতামত ও আছে,স্যাটেলাইট চ্যানেল শুধু আমাদের দেশে নয় পৃথিবীর সব দেশেই আছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সব প্রদেশের সিনেমা গুলো খুব ভালো ব্যবসা করছে, কারন তাদের শিল্পীদের প্রচারে অংশ নেওয়া । সিনেমার প্রতি ভালবাসা । বিভিন্ন অঞ্চলে দেশ বিদেশে প্রচার প্রচারনায় অংশ নেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশের শিল্পীরা ঢাকার হাতে গোনা কয় একটি সিনেপ্লেক্সে ছাড়া ঢাকার বাহিরে কোন সিনেমা হলে যায় না। যার কারনে ছবি গুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। ভালো গল্পের সিনেমা হচ্ছে কিন্তু দর্শকদের উৎসাহ না দিলে তারা হল বিমুখ ই থাকবে । এই প্রসঙ্গে সুগন্ধা সিনেমা হলের কর্ণধার শাহাদাত হোসাইন বলেন,আপনি আমার সিনেমা হলের পরিবেশ দেখুন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল নির্মাণ করার পর ও দর্শক হল মুখি হচ্ছে না কারন নতুন সিনেমা আনলাম চালিয়ে দিলাম ব্যানার লাগালাম রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার লাগালাম । এভাবে এখন আর সিনেমা হল চলবে না। সিনেমা ব্যবসা করতে হলে নায়ক নায়িকা সিনেমা সংশ্লিষ্টদের প্রচার প্রচারনায় অংশ নিতে হবে বিভিন্ন জেলা উপজেলা বিভাগীয় সিনেমা হল গুলোতে যেতে হবে । ভক্তদের কাছাকাছি না আসলে ভক্তরা উৎসাহ পাবে না উৎসাহ পেলেই দর্শক হলে সিনেমা দেখতে আসবে । তিনি আরো বলেন যেভাবে লস দিতে ব্যবসা চালিয়ে আসছি তাতে হয়তো ঠিকে থাকতে পারবো কিনা সন্দেহ এখনো সরকার মহাদয় দেশের সিনেমার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশের কিছু সিনেমা আমদানীর অনুমতি প্রদান করলে হয়তো সিনেমা হলের মালিকগন কিছুটা ব্যবসার মুখ দেখতে পেতো ।
দুই দশক আগেও রমরমা অবস্থা ছিল চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সিনেমা প্যালেস হলটিতে। কাউন্টারের সামনে লেগে থাকত দর্শকদের ভিড়। কিন্তু এই হলটির অবস্থাও এখন আর ভালো নয়। চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনতে ভালোমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ, হলের পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।