চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে রাবেয়া আক্তার নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করেছে তার স্বামী ও নিহতের ছোট বোনের জামাই । খুনের ঘটনার পর থেকে পলাতক অভিযুক্ত মুহাম্মাদ জামিন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হালিশহর থানার আভিযানিক টিম হত্যাকান্ডের ৪৮ ঘণ্টা পার না হতেই ঘটনার সহিত জড়িত মূল আসামী জামিন (২৪) কে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানা এলাকা হতে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত অপর আসামী মোঃ মোস্তফা (২২) কে হালিশহর থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয় ।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হালিশহরের শিশু পল্লীর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের এক নম্বর লেন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাবেয়া আক্তার চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার মানিক মিয়ার মেয়ে। জামিনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করগাঁও গ্রামে।
মঙ্গলবার দুপুর ১ ঘটিকায় চট্টগ্রাম হালিশহর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপ পুলিশ কমিশনার মোঃ জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন ঘটনার বিষয়টি অবগত হয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানা এলাকা হতে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত মূল আসামী জামিন (২৪) ও অপর আসামী মোঃ মোস্তফা (২২) কে হালিশহর থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয় ।
এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহার করা ছুরি হালিশহর থানাধীন এ- ব্লকস্হ jsa ফ্যাশন এর পিছনের খাল হতে উদ্ধার করা হয়। তিনি আরো বলেন,
আটক আসামি দ্বয় কে জিজ্ঞাববাদে জানা যায় গত এক বছর পূর্বে ভিকটিমকে তার প্রথম সংসারের দুই কন্যা সন্তানসহ আসামি মোহাম্মদ জামিল বিবাহ করে সংসার জীবনে ভিকটিমের সাথে আসামির সাংসারিক বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হতো ।
উক্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভিকটিমের বাবা আসামীর নিকট আত্মীয়-স্বজনের সাথে বৈঠক করেন। ভিকটিম হালিশহর থানাধীন বি-ব্লকস্থ হান্নানের মালিকানাধীন মিট ওয়ে অ্যাপারেলস নামে ছোট গার্মেন্টসের চাকরি করতো ।
ভিক টিমকে তার স্বামী প্রতিনিয়ত সন্দেহ করার কারণে ভিকটিম দুই মাস পূর্বে চাকরি ছেড়ে দেয়, ভিকটিম সচ্ছলতার জন্য তার বাবার দোকানের পাশে পিঠা বিক্রি করতো যাহা আসামি জামিন পছন্দ করত না । গত ১০/১/ ২০২৩ ইংরেজি তারিখ, এনজিও হতে লোন উত্তোলনের জন্য একটি ফরমে ভিকটমকে স্বাক্ষর দিতে বলে আসামী জামিন, স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানায় ভিকটিম রাবেয়া খাতুন । এতে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। গত ১৪-১- ২০২৩ ইংরেজি তারিখ, ২:৩০ ঘটিকার সময় আসামি মোহাম্মদ জামিন কাজ শেষে হালিশহর থানাধীন পাবলিক স্কুলের মোড়ে আসামী জামিন ও অপর আসামী মোস্তফা দ্বয় মিলে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৪-১- ২০২৩ ইংরেজি তারিখ সন্ধ্যা ৬ ঘটিকার সময় আসামী দ্বয় ছুরি নিয়ে হালিশহরের শিশু পল্লীর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের এক নম্বর লেন এলাকায় অবস্থিত বাসায় প্রবেশ করে ।
বাসায় মেয়ে থাকায়, জামিন মেয়ে জান্নাতকে ঘর থেকে বেড় করে দেয়। জান্নাত বাসা থেকে বেড় হয়ে তার নানার দোকানে গিয়ে তার নানাকে জানায় তার বাবা ১ টা ছুরি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে। এদিকে আসামি দ্বয় শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে। জামিনের ভায়রা ভাই মোস্তফা ভিকটিমকে ঝাপটে ধরে ফেলে। তৎক্ষনাৎ আসামি জামিন ধারালো ছুরি দ্বারা ভিকটিমের গলায় পোচ মারে, পরে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। ভিকটিম রাবেয়া খাতুন চিৎকার করলে আসামি মোস্তফা আসামি জামিন এর হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে ভিকটিমর গলায় কয়েকবার পোচ মারে। আহত অবস্থায় ভিকটিম দৌড়ে ভিকটিমের বাবার দোকানের সামনে রাস্তায় এসে রাস্তায় পড়ে যায়।
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জহির উদ্দিন জানান, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী তার স্ত্রীর গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। আহত অবস্থায় রাবেয়া নামে এ নারীকে হালিশহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরো বলেন, মোহাম্মদ জামিন ঘটনার পর পালিয়েছিলো, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামী জামিনকে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী ও মোস্তফাকে হালিশহর এলাকা থেকে আমাদের আভিযানিক টিম গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে ।
স্থানীয়রা জানান, এ-ব্লক ৪ নম্বর রোডে টিনশেড বাসায় ভাড়া থাকতেন ভাঙ্গারী (পুরানো জিনিসপত্র) ব্যবসায়ী কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ জামিন। ৯ মাস পূর্বে হাটহাজারীর রাবেয়া খাতুনের সাথে তার বিয়ে হয়।
Leave a Reply