প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার; পশু ও আকার ভেদে এবার চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে সামান্য বেড়েছে। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা, গতবছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। দাম নিয়ে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির নেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তারা টেনশনে আছেন লকডাউনে চামড়া বিক্রি নিয়ে এবং কোরবানি গতবারের চেয়েও কম হওয়া নিয়ে। লকডাউনের মধ্যে ট্যানারি এবং আড়তগুলো বন্ধ থাকলে চামড়া পচে যেতে পারে এবং বিক্রি না হলে লোকসানে পড়ার আশংকার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। তারা গার্মেন্টেসের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউনের মধ্যে ১৫/২০ দিন ট্যানারি এবং আড়তগুলো খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন। পর্যাপ্ত পশু কোরবানি নিয়েও এবার শঙ্কায় আছেন চট্টগ্রামের ২শতাধিক কাঁচা চামড়া আড়তদার-ব্যবসায়ী। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ৬ লাখ লাখ গরু-ছাগল কোরবানি দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত বছর করোনার কারণে সেটা কমে সাড়ে ৪ লাখে নেমে এসেছে। এবার গতবারের চেয়ে আরো কমে সাড়ে ৩ লাখে নেমে আসবে বলে জানান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এই ব্যাপারে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোসলিম উদ্দিন জানান, এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। গতবারের চেয়ে এবার দাম একটু বেড়েছে। তারা যে দাম দেয় শেষ পর্যন্ত সেই দামে চামড়া কিনে না। নির্ধারিত দামে আমরা চামড়া কিনি। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা না কিনলে আমাদের লোকসানে পড়তে হয়। সবচেয়ে আমরা বেশি টেনশনে আছি লকডাউন নিয়ে। লকডাউনের মধ্যে যদি গার্মেন্টসের মতো আমাদের ট্যানারি এবং কাঁচা চামড়ার আড়তগুলো খোলা রাখা না হয় তাহলে আমরা বেচা-বিক্রি করতে পারবো না। আমাদেরকে লোকসানে পড়তে হবে। অনেক ক্ষেত্রে চামড়া পচেও যেতে পারে। তিনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের গরমের মওসুমে আদ্রতা ও তাপমাত্রা বিবেচনায় চামড়ার সঠিক মান ধরে রাখতে কোরবানির চার ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
আমরা চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ১১২ জন সদস্য এবং সমিতির বাইরের ব্যবসায়ীরাসহ মিলে প্রায় ২শতাধিক ব্যবসায়ী প্রায় সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতাম কোরবানি ঈদে। কিন্তু গত বছর সাড়ে ৪ লাখের মতো চামড়া আমরা সংগ্রহ করেছি। এবার ৩ লাখের বেশি হবে না। লকডাউনের কারণে কাঁচা চামড়ায় লবণ দেয়ার জন্য শ্রমিকও পাওয়া যাবে না। ঢাকার ওয়ারী, কুমিল্লা, কঙবাজার থেকে শ্রমিকরা আসেন চট্টগ্রামে। গতবারও আমরা চামড়ার ভালো দাম পাইনি। করোনার কারণে এবারও দাম নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
জানা গেছে, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া কিনতে হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা, গতবছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল।
এছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবছর খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকায় বেঁধে দিয়েছিল সরকার।