“চাইলেই তো সবসময় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে যাওয়া হয় না। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এখন পাহাড়ি গ্রামেই আছি। এখানে পাহাড়ি
আদিবাসীদের পছন্দের সব খাবার পাওয়া যাচ্ছে।”
এভাবেই কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল রয়েল টিউলিপে পাহাড়ি খাবার খেয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন হাফসা নামের এক পর্যটক।
হাফসার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়িতে হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকেন। পরিবাবারের সাথে কক্সবকজার ঘুরতে এসে তারকার মানের হোটেলে রয়েল টিউলিপে রাতে ডিনার করতে গিয়ে বিভিন্ন রকম পাহাড়ি ফলমূল ও খাবার দেখে তার গ্রামের স্মৃতি মনে পড়ে।
পাহাড়ি খাবারের পসরা দেখে “রয়েল টিউলিপকে” সাগরপাড়ে টুকরো পার্বত্য চট্টগ্রাম মনে হচ্ছে তার। পাহাড়ি খাবার ‘বাঁশের তরকারির’ প্রশংসা করে হাফসা বলেন, “এই খাবারের স্বাদ কখনোই ভুলবার নয়।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবারের যাত্রা শুরু হয়েছে তারকা মানের হোটেলে রয়েল টিউলিপে। স্পেশাল এই আয়োজন নিয়মিত পাওয়া যাবে এই হোটেলে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনপ্রিয় খাবারের প্রচারণার লক্ষ্যে ৪দিন ব্যাপি আয়োজন করা হয়েছে।
সার্কেলের প্রধান রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় প্রধান অতিথি হিসেবে এই মেলার উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রয়েল টিউলিপ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-র সহকারী মহাব্যবস্থাপক নাভিদ আহসান চৌধুরী, আজিম শাল গ্রুপের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেকে।
মেলায় খাবারের স্টল ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি স্টলেই রয়েছে ভিন্নতা। পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের বিভিন্ন উপজাতিদের নিজস্ব জনপ্রিয় ১০০ রকমের বিভিন্ন খাবারের সমাহার স্টলগুলোতে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জনপ্রিয় খাবার (চিংড়ির সঙ্গে সবজি), বাচ্চুরি (বাঁশের তরকারি), হাঙ্গারা সুগুরে গুলো (কুমড়া দিয়ে কাঁকড়া), মংশো মরিচ গোদিয়ে (মুরগি এবং মরিচ ভর্তা), হুরো হুরবো (মুরগির সালাদ চিলি), মাচ হেবাং (সিটিএইচ রান্নার শৈলী মাছ)। এখানে বাঁশের চোঙায় মুরগি রান্না ছিলো একেবারে ভিন্ন রকমের।
বাঁশের চোঙায় পরিবেশিত রান্না স্বাদে আসে ভিন্ন মাত্রা। সাথে পাহাড়ি ফলমূলের মাঝে রয়েছে, আখ, আনারস, পেঁপে, কলা, জাম্বুরা থেকে শুরু করে পাহাড়ি জুম চাষের বিভিন্ন ফল।
তিন পার্বত্য জেলার মানুষের জনপ্রিয় খাবার স্টলে প্রদর্শনী করছে। এ খাবারের আয়োজন নিয়ে খুব বেশি প্রচার না থাকায় ক্রেতা, দর্শনার্থীর ভিড় কিছুটা কম ছিল।
আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানায়, রয়েল টিউলিপের রন্ধনশিল্পীরা পার্বত্য অঞ্চলের জনপ্রিয় ১০০টি আইটেম রান্না করেছেন। তারা বাঁশের চিকেন, পাজন (চিংড়ির সঙ্গে সবজি), বাচ্চুরি (বাঁশের তরকারি), হাঙ্গারা সুগুরে গুলো (কুমড়া দিয়ে কাঁকড়া), মংশো মরিচ গোদিয়ে (মুরগি এবং মরিচ ভর্তা) ), হুরো হুরবো (মুরগির সালাদ চিলি), মাচ হেবাং (সিটিএইচ রান্নার শৈলী মাছ) চাল এর পায়েশ, ঝুম লাড্ডু এবং কোলা পিঠা সবই পরিবেশন করা হবে। খাদ্য উৎসবের সময় রোজেল চা ইত্যাদি রান্না করে স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়।
এই আয়োজনে অংশ নেওয়া হেবাং রুহেল বলেন, তারকা মানের হোটেলে রয়েল টিউলিপ যেভাবে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর খাবারের আয়োজন করেছে তা অন্য হোটেল মালিকরাও করলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো দেশজুড়ে প্রচার হতো এবং হারিয়ে যেতো না।
চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের এই খাবারগুলো যদি ক্রেতারা পছন্দ করেন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আমাদের জাতিসত্ত্বার খাবার গুলো পরিচিতি লাভ করবে।
তিনি দাবী করেন, এটা এক প্রকার সংবিধান রক্ষা করা। আমাদের এই খাবার দেশের ঐতিহ্য বহন করে। তাই এই ধরণের আয়োজন আরো ব্যাপকভাবে আয়োজন করা উচিৎ।
কক্সবাজার রয়েল টিউলিপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক নাভিদ আহসান চৌধুরী বলেন, আমাদের এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা। আমরা সবসময় দেখতে পাই বিভিন্ন বিদেশি খাবারের মাঝে আমাদের দেশের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি পিছনে ফিরে থাকায় তাহলে দেখবেন আমাদের দেশের খাবার গুলো খুবই ভালো। তবে পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকায় পিছিয়ে পড়ছে।তাই আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি