স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন ফকির আলমগীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁর কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।
ফকির আলমগীর ছবি : সংগৃহীত
এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীতচর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।
করোনায় আক্রান্ত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের ফুসফুস ৬০ শতাংশ সংক্রমিত। স্বাভাবিক নিয়মে তাঁকে খাবার খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না। নল দিয়ে বিশেষ উপায়ে তরল খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। আজ শনিবার দুপুরে জানিয়েছেন বরেণ্য এই শিল্পীর ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব।

ঢাকার গুলশানের একটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতে ভর্তি করানো হয় করোনায় আক্রান্ত সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে। তার আগে কয়েক দিন ধরে ফকির আলমগীরের গায়ে জ্বর ও খুসখুসে কাশি ছিল। এরপর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ফলাফল হাতে পেলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। বৃহস্পতিবার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয় এবং বেড়ে যায় শ্বাসকষ্ট। এরপর তাঁকে দ্রুত গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে গ্রিন রোডের সেই হাসপাতালে পাওয়া যায়নি তা। এদিক–ওদিক যোগাযোগ করে শেষ পর্যন্ত আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায় আইসিইউ। বর্তমানে সেই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তিনি।

খবরটি জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর।
এদিকে মাশুক আলমগীর বলেন, ‘বাবার এমনিতে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। চিকিৎসকেরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবাকে গতকাল দুই ব্যাগ প্লাজমা আর ইনজেকশনও দেওয়া হয়েছে। গতকাল যে অবস্থা ছিল, এখনো তাই। সে হিসেবে বলা যেতে পারে, বাবার অবস্থা অপরিবর্তিত। সবার কাছে বাবার দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চাই ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যাঁরা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তাঁর।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।