আগামী নভেম্বরে মূল মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে মূল নির্বাচনী লড়াইয়ের আগে শুরু হচ্ছে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দলের প্রাইমারিতে প্রার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। ২২ জুন দুই দলের এ বাছাই অনুষ্ঠিত হবে। ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত নগরের এই প্রাইমারি নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের খুব একটা তোড়জোড় নেই। দৃশ্যত কোনো তৎপরতাও নেই তাদের। ডেমোক্রেটিক দলের আট প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নগর। তাই এটা ধরে নেওয়া যায়, ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে যিনি বিজয়ী হবেন, তিনিই হবেন নিউইয়র্কের পরবর্তী নগরপিতা। মার্কিন কংগ্রেসের নিউইয়র্কের প্রতিনিধি জনপ্রিয় নেতা ওকাসিও ৫ জুন মায়া উইলির প্রতি তাঁর সমর্থন ঘোষণা করেছেন। মায়া উইলি একজন প্রগতিশীল নেতা ও সিভিলিয়ান কমপ্লেইন রিভিউ বোর্ডের সাবেক চেয়ারপারসন। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম পুলিশ বাহিনী ‘এনওয়াইপিডি’র ওপর তদারকি করে এই বোর্ড।
নগরে অপরাধ বেড়ে চলায় এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইস্যু এটিই। এ অবস্থায় ওকাসিওর এই সমর্থনের ওজন পরিমাপ করতে অবশ্য আরও কিছুদিন লাগবে। তাঁর এ সমর্থনের পরও ওই ইস্যুর কারণে হয়তো উইলির পক্ষে নগরে সেরকম প্রভাব দেখা যাবে না। উইলি নগরের পুলিশ বিভাগের বাজেট থেকে আরও এক বিলিয়ন ডলার কর্তনের প্রস্তাব করেছেন। বর্তমান মেয়র বিল ডি ব্লাজিও গত বছর একই পরিমাণ অর্থ পুলিশের বাজেট থেকে কমিয়ে দিয়েছিলেন।
গত গ্রীষ্মে নিউইয়র্ক নগরে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতার ওপর পুলিশের সহিংস ভূমিকার উল্লেখ করে বিজ্ঞাপনও প্রচার করেছেন মায়া উইলি। বিজ্ঞাপনে তিনি উল্লেখ করেন, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গাড়ি চালিয়েছে। অনেককে পিটিয়ে আহত করেছে। তিনি মেয়র হলে এর প্রতিকার করবেন। পুলিশ বিভাগের এখন এটা বোঝার সময় এসেছে যে, মানুষের শ্বাস নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
নতুন দুই জনমত জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে নগরবাসীর উদ্বেগের প্রধান দুই বিষয় অপরাধ ও জনজীবনে নিরাপত্তা। অবস্থা এমন যে, গত এক মাস ধরে নগরবাসীর প্রধান উদ্বেগের কারণ হিসেবে অপরাধ বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি কোভিড-১৯ এর উদ্বেগকেও হার মানিয়েছে।
দুটি জরিপেই দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ ভোটার মনে করেন অপরাধ দমনে এনওয়াইপিডির আরও পুলিশ কর্মকর্তাদের রাস্তায় নামানো উচিত। এতে দ্বিমত করেছেন ২০ শতাংশ ভোটার। এক বছর আগের তুলনায় নগরে গোলাগুলি, ডাকাতি ইত্যাদি দ্বিগুণ হয়েছে। খুন-খারাপি ২৩ শতাংশ বেড়েছে। এশীয় আমেরিকান ও ইহুদিদের ওপর সহিংস আক্রমণের প্রবণতাও ব্যাপক হারে বেড়েছে এ বছর।
এ ক্ষেত্রে আরেক প্রার্থী ব্রুকলিন বরোর প্রেসিডেন্ট এরিক অ্যাডামস সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ডেমোক্রেটিক দলের ভোটারদের মধ্যে তিনি ২২ শতাংশের সমর্থন পাচ্ছেন। এ ছাড়া অ্যান্ড্রু ইয়াং সমর্থন পাচ্ছেন ১৬ শতাংশের। এরিক একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নগরের রাস্তায় পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছেন। করেছেন পুলিশ বিভাগের বাজেট বৃদ্ধির প্রস্তাব। প্রগতিশীলদের ‘ডিফেন্ড দ্য পুলিশ’ স্লোগানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এই মেয়র প্রার্থী এবং এতে তাঁর জনসমর্থনও বাড়ছে। জরিপে দেখা যায় ৩৩ শতাংশ ভোটার মনে করেন, অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে তিনি সবার চেয়ে ভালো প্রার্থী।
এরিক বলেন, কংগ্রেসওমেন ওকাসিও-কর্টেজ এবং প্রার্থী মায়া উইলি এমন সময় পুলিশ বিভাগের বাজেট কমিয়ে এ বাহিনীকে সংকুচিত করতে চান যখন কৃষ্ণ ও বাদামি লোকজনকে নগরীর রাস্তায় গুলি করা হচ্ছে; ঘৃণামূলক অপরাধ এশীয় ও ইহুদিদের আতঙ্কিত করে রেখেছে এবং নিউইয়র্কের নিরীহ নাগরিককে ছুরিকাঘাত করা হচ্ছে। অ্যাডামস বলেছেন, ‘তাঁরা জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার বদলে স্লোগানের রাজনীতি করছেন। এতে নিউইয়র্কের মানুষের জীবন বিপন্ন হবে।’
ওদিকে অ্যান্ড্রু ইয়াং নিউইয়র্কে বর্ণ বিদ্বেষ ও বিদ্বেষমূলক হামলার বিষয়ে কথা বললেও এ নগরের আগ্নেয়াস্ত্র সমস্যা নিয়ে আগেভাগে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে নির্বাচনী দৌড়ে শুরুতে এগিয়ে থাকলেও প্রাইমারির সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে।