ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাবর আলীর মেয়ে নাজমা। ১৯৯০ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালে ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের জামিরাপাড়া গ্রামের একজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর সংসারে থাকাকালে তিনি ১৯৯৫ সালে এসএসসি ও ১৯৯৮ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ২০০১ সালে নাজমার ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
২০০৬ সালে ব্রাকে চাকুরি নেন নাজমা। ২০০৭ সালে নাজমাকে না জানিয়ে তার স্বামী গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয় এবং ওই কলহের জের ধরে মেয়ে চৈতীজাহান স্মৃতিকে নিয়ে ২০০৮ সালে এক কাপড়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয় ভালুকায় চলে আসেন।
স্বামীর নামে পারিবারিক আদালতে একটি ও অন্য আদালতে ৪টি মামলা করেন। পারিবারিক আদালতে নাজমার করা মামলাটি এখনো বিচারাধীন। চার বছর চাকরির পর ব্রাক ছাড়েন নাজমা বেগম। পরে স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওতে চাকরির পাশাপাশি ভালুকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস থেকে সেলাই, যুব উন্নয়ন থেকে নকশি কাঁথা এবং কৃষি অফিসের মাধ্যমে শাক-সব্জি চাষের প্রশিক্ষণ নেন। এসবের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে ২০১৩ সালে ডিগ্রী পাশ করেন এবং ২০১৭ সালে এলএলবি করেন।
ওই সময় সেলাইয়ের কাজ করে অতিকষ্টে উপর্জিত অর্থে বাসাভাড়া মিটিয়ে, নিজের ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন তিনি। ২০১৪ সালে নারী উদ্যোগক্তা হিসেবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস থেকে ১৫ হাজার টাকা, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস থেকে ৪০ হাজার টাকা ও নিজের আয়ের টাকায় ভালুকা পৌরসভার মেজর ভিটায় নাজমা হস্ত শিল্প ও সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। ২০১৬ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ জয়ীতা ও সফল আত্মকর্মী হিসেবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস থেকে নাজমা বেগম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন।
নাজমা বেগম জানান, তাঁর নাজমা হস্তশিল্প ও সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর মাধ্যমে এলাকায় নারীদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করেন। নাজমার মেয়ে চৈতী জাহান স্মৃতি সিলেট পলিটেকনিক্যালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে।
নাজমা বেগমের কষ্টার্জিত আয় থেকে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, বাসাভাড়া, খাবারসহ বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে অল্প কিছু টাকা জমা থাকে। ইতোমধ্যে নিজের উপর্জিত অর্থে তিনি উপজেলার রাজৈ এলাকায় সাড়ে ১৯ শতাংশ জমি কিনেছেন। উপজেলার রাজৈ গ্রামে মহিলা উন্নয়ন সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। তিনি জানান, তাঁর স্বামী তাকে তালাক দিয়েছেন বলে শুনেছেন। কিন্তু তালাকের কোন কাগজ এখনো তার হাতে আসেনি।