নির্ধারিত সময়ের পর ইনজুরি টাইমের জন্য যোগ করা ৫ মিনিট শেষ হওয়া বাঁশি বাজতেই, যেখানে ছিলেন সেখানেই বসে পড়লেন লিওনেল মেসি। দূর থেকে ছুটে এলেন রদ্রিগো ডি পল, মার্কোস আকুনা, নিকোলাস তালিয়াফিকোরা। আনন্দের কান্নারত মেসিকে ঘিরে উদযাপন শুরু করেন সবাই।খানিক পরেই উঠে সারা মাঠ ঘুরে সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপনে যোগ দেন মেসি। ছুটে আসা কোচ লিওনেল স্কালোনি তুলে নেন নিজের কোলে। আর দলের সব খেলোয়াড়রা মিলে হাওয়ায় ভাসার মেসিকে, দিতে থাকেন হর্ষধ্বনি। নিজেদের উদযাপন শেষ হওয়ার পরপরই পরিবারের কথা মনে পড়ে মেসির।
মাঠে বসেই মোবাইল ফোনে কল করেন স্ত্রী আন্তোলেনা রকুজ্জোকে এবং প্রায় এক মিনিটের বেশি সময় ভিডিও কলে কথা বলেন স্ত্রী ও তিন ছেলে থিয়াগো মেসি, মাতেও মেসি ও সিরো মেসিদের সঙ্গে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এই অনুভূতিটি পুরোপুরি নতুন মেসির জন্য।কেননা এর আগে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে পারেননি মেসি। তখন পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনের বদলে করতে হয়েছে দুঃখ ভাগাভাগি। এমনকি ফাইনাল হারের কষ্ট দূর করতে ছুটিতেও চলে যেতেন বলে জানালেন মেসি।
তবে এবার ব্রাজিলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সবকিছুই ভিন্ন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মেসি বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপর পরিবারের কথা মনে হয়েছে আমার। এর আগে অনেকবার আমাদের ভুগতে হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন দুঃখ ভুলতে আমরা ছুটিতে ঘুরতে চলে যেতাম। কিন্তু এবার এটা পুরোপুরি ভিন্ন।’
ওদিকে আর্জেন্টিনায় বসে রকুজ্জোও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন মেসির সঙ্গে শিরোপা উদযাপনের জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে মেসিদের উদযাপনের একটি ছবি আপলোড করে আন্তোলেনা লিখেছেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন। এগিয়ে যাও আর্জেন্টিনা। এগিয়ে যাও ভালোবাসা (মেসি), এগিয়ে যাও।’তিনি আরও লিখেছেন, ‘এতদিন ধরে যা স্বপ্ন দেখেছ, অবশেষে তা পেয়েছ। তুমি সত্যিই এটির যোগ্য দাবিদার। তোমাকে দেখতে ও একসঙ্গে উদযাপনের তর সইছে না আমার।’সংবাদ সম্মেলনে মেসি আরও বলেছেন ‘আমরা এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না যে আমরা চ্যাম্পিয়ন বা আমরা কী অর্জন করেছি! তবে এটা এমন একটা ম্যাচ যা সবসময় ইতিহাসে লেখা থাকবে। শুধু আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি বলেই, ব্রাজিলকে তাদেরই মাটিতে হারিয়েছি বলে।’
এসময় মেসি জানান, আগে অনেকবার খালি হাতে ফিরলেও, এ দিনটি আসবেই তিনি জানতে। মেসির ভাষ্য, ‘এটা দুর্দান্ত। যে আনন্দ অনুভূত হচ্ছে, তা অবর্ণনীয়। আমাকে অনেকবার কষ্ট নিয়ে ফিরতে হয়েছে। তবে আমি জানতাম এটা একবার হবেই।’
নিজ দলের ওপর থাকা আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দলের ওপর আমার অনেক আত্মবিশ্বাস ছিল। গত কোপা আমেরিকার পর থেকে শক্তিশালী হয়ে গড়ে উঠেছে দলটি। ভালো মানুষদের নিয়া গড়া এই দল। যারা সবসময় সামনে এগুতে মুখিয়ে থাকে এবং কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ করে না।’মেসির শেষ কথা, ‘অনেকদিন ধরে আমাদের জৈব সুরক্ষা বলয়ে বন্দী থাকতে হয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্যটা পরিষ্কার ছিল এবং আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পরেছি। এই আনন্দ অপরিসীম। অনেকবার আমি এই সময়ের স্বপ্ন দেখেছি।’