ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যসহ আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে তিন’ শ। ডিপোতে থাকা কনটেইনারগুলোতে দাহ্যপদার্থ থাকায় কিছুতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরইমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে দেড় শতাধিক। হাসপাতালে প্রকট হয়ে উঠেছে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের। তবে রাত থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ মানুষ রক্ত দিতে হাসপাতালে ছুটে আসছে। ঘটনার পরপর সিটি মেয়র, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকসহ অনেকে হাসপাতালে এসে পরিস্থিতি তদারকি করেন। সিভিল সার্জনের আহ্বানে সরকারি বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বেচ্ছাসেবীরা চমেক হাসপাতালে ছুটে গিয়ে চিকিৎসা সেবায় যোগ দেন।
শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এ আগুন লাগে। এরপর একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে থাকে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার এলাকা। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে এলেও আগুনের ভয়াবহতা সামাল দিতে না পারায়, আশপাশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে যোগ দেয় আরও ২৪টি ইউনিট। তবে পানি সংকটে পড়তে হয় তাদের।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রাণহানির সংখ্যাও। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় তিনশ জন। স্বজনদের আহাজারি ও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে এক শোকাবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাতের হাসপাতাল প্রাঙ্গনে।
স্থান সংকুলান না হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করিডোর ও খালি জায়গাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত ও দগ্ধদের। ছুটে এসেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনও। রক্ত দিতে আহবান করা হয়েছে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের।
এ ঘটনায় আট পুলিশ সদস্য ও ২১ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীও আহত হন। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এক পুলিশ সদস্যের পা। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, চিকিৎসায় সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। বাতিল করা হয়েছে সবার ছুটি। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও।
ঘটনার পর পরই সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, সিভিল সার্জন ইলিয়াছ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসপাতালে ছুটে আসেন। বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি প্রয়োজনে সিএমএইচকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।
রাসায়নিক দ্রব্য থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। এরই মধ্যে আশপাশের এলাকায় শুরু হয়েছে রাসায়নিক বিষক্রিয়া। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেখানে নিজস্ব কোন অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না। অন্যদিকে উচ্চপর্যায়ের দাহ্য পদার্থের কনটেইনার থাকায় এবং থেমে থেমে বিস্ফোরণ হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের। এসব দাহ্য পদার্থ ডিপোতে রাখার অনুমোদন ছিল কিনা তা নিয়েও উঠে আসছে আলোচনায়।