শনিবার (৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি ফারুক উল হক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে অনুসন্ধান, গোয়েন্দা তৎপরতা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে হত্যার
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. মিরাজ হাওলাদার (৩০) ও আবু সুফিয়ান সুজন (২১)।
ডিসি ফারুক উল হক আরও জানান, গত বছর ৩ অক্টোবর সকালে বন্দর থানার বড়পোল মনসুর মার্কেটের সামনে একটি কাভার্ড ভ্যান চট্টমেট্রো-ট-১১-৮৮১২ পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। এ সময় ক্যাবিনের ভিতরে সিটসহ বিভিন্ন জায়গায় রক্তমাখা ছিল। পরবর্তীতে হালিশহর থানা পুলিশ ৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টার্মিনালের পূর্বপাশে নির্মাণাধীন নতুন পতেঙ্গা লিংক রোডে ডোবার মধ্যে কাভার্ড ভ্যানের চালক মো.রিয়াদ হোসেন সাগরের বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করে। ৩ অক্টোবর জোরারগঞ্জ থানার দক্ষিণ সোনাপাহাড় ওমেগা গ্যাস কোম্পানি এলাকা থেকে একটি অজ্ঞাতনামা মরদেহ জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় হালিশহর ও জোরারগঞ্জ থানায় পৃথক দুইটি মামলা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, গ্রেফতার মিরাজ ও সুজন বন্দরের মালামাল পরিবহনের কাজে নিয়োজিত পরিবহনের বদলি চালক। হত্যার শিকার হন চালক রিয়াদ হোসেন সাগর ও হেলপার মো.আলী। গ্রেফতার দুইজনসহ মোট তিনজন বন্দর থেকে মালামাল ঢাকা নিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী নিউ মার্কেট এলাকা থেকে ২টি টিপ ছোরা কিনে তারা।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতার মিরাজ ২ অক্টোবর নিশ্চিত হয় এসিআই লিমিটেড এর মেশিনারিজ নিয়ে ঢাকায় যাবে রিয়াদ। গাড়ি নিয়ে বের হলে মিরাজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিটি গেইট হতে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে গাড়িতে ওঠে। জোরারগঞ্জে কমল নামক হোটেলে রাতে খাওয়া-দাওয়া করেন গাড়ি চালক ও হেলপারসহ আসামি। খাওয়ার সময় গাড়ি চালক ও হেলপার মিরাজকে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেন। এরপর মিরাজ গাড়ি চালাতে থাকে। নাহার এগ্রো পার হওয়ার পর সুজন ও বাবু নামের আরেকজন একসঙ্গে মিলে গাড়িচালক রিয়াদ ও হেলপার মো.আলীকে গাড়ির কেবিনের পিছনে ছোরা দিয়ে হত্যা করে।
পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, হত্যা করার পর বিএসআরএম রডের ডিপো থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার চট্টগ্রামে আসতে থাকে আসামিরা। জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় এমেগা গ্যাস কোম্পানির পাশে হেলপারকে রাস্তার পাশে ডোবায় ফেলে দেয়। এসময় হেলপারের বাঁচার চেষ্টা দেখে আসামি বাবু হাতে থাকা ছোরা দিয়ে পানিতে নেমে গলা কেটে হেলপারের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
কাভার্ড ভ্যানের ভিতরে চালককে মুখ থেতলে দিয়ে বায়েজিদ লিংক রোডে মরদেহ ফেলার চেষ্টা করে আসামিরা। সেখানে গাড়ির চাপ থাকায় কাভার্ডভ্যানটি ঘুরে পতেঙ্গা আউটার লিংক রোডের হালিশহর এলাকায় রাস্তার পাশে চালকের মরদেহ পানিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। গাড়ির তেল শেষ হওয়ায় এবং কেবিনে রক্ত থাকায় মালামালসহ কাভার্ডভ্যান বড়পুল মনসুর মার্কেটে ফেলে যায় আসামিরা।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির গোয়েন্দা বন্দর বিভাগের এডিসি এ এ এম হুমায়ুন কবীর উপস্থিত ছিলেন।